ফৌজদারি কার্যবিধিতে দণ্ড স্থগিতের বিধান নেই
ফৌজদারি কার্যবিধিতে দণ্ড স্থগিতের বিধান নেই বলে এক রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত রায়ে বলেছেন, দণ্ডিত কোনো ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংবিধানের প্রস্তাবনা ও সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের পুরোপুরি বিপরীত।
আদালত বলেছেন, দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তি জামিনে আছেন বা আদালতের আদেশে তাঁর সাজা স্থগিত হয়েছে—এটি কোনো বিষয় নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দণ্ড ও সাজা উপযুক্ত আদালতে বাতিল না হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি পেতে পারেন না। শুধু আপিল বিচারাধীন—এর অর্থ এই নয় যে দণ্ডিত ব্যক্তি নিষ্পাপ হিসেবে গণ্য হবেন। যদি না সেগুলো উপযুক্ত আদালতে বাতিল হয়।
দুর্নীতির মামলায় আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে বিএনপির পাঁচ নেতার করা পৃথক আবেদন খারিজ করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর ওই আদেশ দেন। ৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ আদেশটি রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, পৃথক পাঁচটি দুর্নীতির মামলায় বিভিন্ন সময়ে বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপির পাঁচ নেতার দণ্ড ও সাজা হয়েছিল। তাঁরা হলেন আমানউল্লাহ আমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. মসিউর রহমান ও মো. আবদুল ওহাব। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে পাঁচ নেতা হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। হাইকোর্ট এর আগে তাঁদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। তাঁদের বিচারিক আদালতের দেওয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত হয়। তাঁরা জামিনও পান। এরপর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা পৃথক আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিতে ওই পাঁচ নেতা দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক আবেদন করেছিলেন।
আপিল বিচারাধীন অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিতে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে ওই পাঁচ নেতা ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারার সঙ্গে ৫৬১–এ ধারায় হাইকোর্টে পৃথক আবেদন করেছিলেন। এক সঙ্গে শুনানি শেষে আবেদন খারিজ করে ওই রায় দেওয়া হয়। বিএনপির পাঁচ নেতা হলেন আমানউল্লাহ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. মসিউর রহমান ও মো. আবদুল ওহাব।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা উল্লেখ করে আদেশে বলা হয়, ধারাটি সরল পাঠে এটি স্পষ্ট যে দোষী সাব্যস্ত ও সাজা ঘোষণার পর আপিলে সাজা স্থগিত করতে পারেন আপিল আদালত। কিন্তু ওই ধারায় (৪২৬ ধারা) সাজা স্থগিত করার জন্য কোনো বিধান নেই। আদেশের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে সাজা স্থগিত হলো না, কিন্তু দণ্ডিত ব্যক্তি জামিন পেলেন—সে ক্ষেত্রে সাজা স্থগিত হয়েছে বলে ধরা হয়। তবে ৪২৬ ধারা অনুসারে দণ্ড স্থগিতের বিধান দেখা যাচ্ছে না। তাই আবেদনকারীদের (পাঁচ নেতা) দণ্ড স্থগিতের সুযোগ নেই।
আদালত বলেছেন, সংসদ সদস্য হলেন মানুষের ক্ষমতা, সম্পত্তি ও মঙ্গলের ট্রাস্টি। তাদের উচ্চ নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে এবং সর্বোচ্চ স্তরের সততা থাকতে হবে। এ থেকে কোনো বিচ্যুতি সততার নৈতিক স্খলন হিসেবে বিবেচিত হয়।…দুর্নীতিবাজ যদি নির্বাচিত হন, তাহলে ভয় ও আনুকূল্যের বাইরে থেকে শপথ অনুসারে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে পারেন না।
পূর্ণাঙ্গ আদেশে হাইকোর্ট বলেছেন, দেখা যাচ্ছে সাক্ষ্য-প্রমাণ, যাচাই-বাছাইয়ের পর বিচারিক আদালত আবেদনকারীদের (পাঁচ নেতা) দোষী সাব্যস্ত করেন। তাঁরা আপিল করেছেন, যা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। আপিল বিচারাধীন অবস্থায় তাঁদের অবস্থান দণ্ডিত সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। উচ্চ আদালত তাদের সাজা স্থগিত করেননি। কিন্তু আদালতের আদেশে তাঁরা জামিন পেয়েছেন। জামিন আদেশের মাধ্যমে সাজার আদেশ স্থগিত বলে মনে হতে পারে, কিন্তু দণ্ড এখনো বহাল। সুতরাং সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আবেদনকারীদের (পাঁচ নেতা) দণ্ড স্থগিতের সুযোগ নেই। সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে আবেদনকারীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য।
সংবিধানের ৬৬ (২) ঘ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ন্যূনতম দুই বছর কারাদণ্ডে কেউ দণ্ডিত হলে সাজা খাটার পর পাঁচ বছর না পেরোলে তিনি নির্বাচনের যোগ্য হবেন না।


No comments